স্বদেশ ডেস্ক:

চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজ (চমেক) হাসপাতালে এক অনুষ্ঠানে এসে রাজনীতির উত্তাপ ছড়ালেন শিক্ষা উপমন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল। গতকাল সোমবার ওই অনুষ্ঠানে তিনি হাসপাতালকে ঘিরে কোনো ‘দালাল ও অপরাধীচক্রকে’ প্রশ্রয় না দেওয়ার জন্য প্রশাসন ও রাজনৈতিক নেতাদের প্রতি আহŸান জানিয়ে বলেন, হাসপাতালে ব্যবসা করা, ডিম-মুরগি সরবরাহ করা কোনো রাজনীতিবিদের কাজ নয়।

মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল চমেক হাসপাতাল ব্যবস্থাপনা কমিটির সভাপতি। গত বছরের ৫ আগস্ট চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের (চসিক) মেয়র পদে আ জ ম নাছির উদ্দীনের মেয়াদ শেষ হওয়ার পর নওফেল এ দায়িত্ব নেন। এর আগে মেয়র পদে থাকাকালীন চমেক হাসপাতাল ব্যবস্থাপনা কমিটির সভাপতি ছিলেন আ জ ম নাছির উদ্দীন। চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজ (চমেক) ছাত্রলীগ ও হাসপাতালের চিকিৎসকদের ওপর তিন দশকের বেশি সময় ধরে আ জ ম নাছিরের নিয়ন্ত্রণ রয়েছে।

অন্যদিকে মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেলের বাবা সাবেক মেয়র এবিএম মহিউদ্দিন চৌধুরীর সঙ্গেও রাজনৈতিকভাবে বৈরী সম্পর্ক ছিল আ জ ম নাছিরের। ফলে গতকালের অনুষ্ঠানের বক্তৃতায় নওফেল কোনো রাজনীতিবিদের নাম উল্লেখ না করলেও চট্টগ্রাম বিএমএর একাধিক নেতার ধারণা, আ জ ম নাছির উদ্দীন ও তার অনুসারী চিকিৎসক নেতাদের উদ্দেশেই তিনি এ ধরনের বক্তব্য দেন। জাতীয় শোক দিবস উপলক্ষে গতকাল চমেক হাসপাতালে চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জের পক্ষ থেকে ৪০টি মেডিক্যাল শয্যা ও ১০টি

অক্সিজেন সিলিন্ডার চমেক হাসপাতালকে দেওয়া হয়েছে। এসব চিকিৎসাসামগ্রী বিতরণ অনুষ্ঠানে উপমন্ত্রী মহিবুল হাসান নওফেল প্রধান অতিথি ছিলেন। অনুষ্ঠানে মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল বলেন, চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে দীর্ঘদিন ধরে একটি চক্র

নানাভাবে অপকর্ম করে গেছে। এখনো তারা বিভিন্নভাবে নানা সুযোগ নিতে মরিয়া হয়ে আছে। আমরা সবাই তাদের কাছ থেকে পরিত্রাণ চাই। তবে হাসপাতালের অবস্থা আগের চেয়ে পাল্টে গেছে। আগে এখানে দালাল, ওষুধ ব্যবসায়ী কিংবা তাদের লোকজন এসে ঝামেলা করত। অপরাধীরা বিভিন্ন সুযোগ নেওয়ার চেষ্টা করত। কিন্তু বর্তমান পরিচালক দায়িত্ব নেওয়ার পর তিনি এসব অন্যায়কে প্রশ্রয় না দেওয়ার কারণে পরিবেশ পাল্টে গেছে।

কয়েকজন আওয়ামী লীগ নেতার প্রতি ইঙ্গিত করে নওফেল বলেন, রাজনৈতিক নেতৃত্বকে আহŸান জানাবÑ ক্ষুদ্র স্বার্থের জন্য আমরা যেন কোনো জঘন্য অপরাধীকে প্রশ্রয় না দিই। আমি প্রশ্রয় না দিলে হয়ত তারা আরেকজনের কাছে যাবে, তিনি না দিলে অন্যজনের কাছে যাবে। সুতরাং আমরা সবাই মিলে যদি সিদ্ধান্ত নিই যে, ক্ষুদ্র রাজনৈতিক স্বার্থে অথবা নিজের ব্যবসায়িক স্বার্থে কোনো জঘন্য অপরাধীকে আমরা প্রশ্রয় দেব না। চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল একটি সরকারি প্রতিষ্ঠান। সেখানে ব্যবসা করতে হবে, মুরগি-ডিম সরবরাহ দিতে হবেÑ রাজনীতিবিদ হিসেবে আমরা যেন এসবের মধ্যে ঢুকে না যাই। হাসপাতালে মুরগি-ডিম সরবরাহ করা কোনো রাজনীতিবিদের কাজ নয়।

চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল এসএম হুমায়ুন কবিরের সভাপতিত্বে এবং অবসরপ্রাপ্ত মেজর মোহাম্মদ এমদাদুল ইসলামের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে বক্তব্য দেন চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জের চেয়ারম্যান আসিফ ইব্রাহীম, চসিকের প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. সেলিম আকতার চৌধুরী, স্টক এক্সচেঞ্জের পরিচালক লিয়াকত হোসেন চৌধুরী, ব্যবস্থাপনা পরিচালক মামুন উর রশিদ, সহকারী মহাব্যবস্থাপক আরিফ আহমেদ এবং কোম্পানি সেক্রেটারি রাজীব সাহা, চমেক হাসপাতালের উপ-পরিচালক ডা. আফতাবুল ইসলাম ও সহকারী পরিচালক ডা. রাজীব পালিত।